এ আচরণ জঘন্য ও অগ্রহণযোগ্য
শরণার্থীদের প্রতি হাঙ্গেরির ‘জঘন্য ও
অগ্রহণযোগ্য’ আচরণের কড়া সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন।
হাঙ্গেরির পুলিশ গত বুধবার প্রতিবেশী সার্বিয়ার সীমান্তে বিক্ষুব্ধ
শরণার্থীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস, জলকামানের পানি ও মরিচের গুঁড়া ছুড়ে
মারে। হাঙ্গেরি সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৬
হাজার ২০০ জনের বেশি শরণার্থী সার্বিয়া থেকে ক্রোয়েশিয়ায় গেছে। খবর
গার্ডিয়ানের।
হাঙ্গেরির উদ্দেশে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘শরণার্থী ও
অভিবাসীদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা দেখে আমি ব্যথিত হয়েছি। এটা
গ্রহণযোগ্য নয়...কারণ, ওরাও মানুষ। তারা সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে পালিয়ে
এসেছে। আমাদের অবশ্যই সহানুভূতিশীল নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে।’
হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেতার সিয়েইয়ার্তো
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার জবাব দিয়েছেন। তিনি বুদাপেস্টে গতকাল
এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘হাঙ্গেরি সীমান্তে বুধবারের ঘটনা নিয়ে
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু কিছু খবর উদ্ভট ও দুঃখজনক।
আক্রমণাত্মক লোকজনকে কখনোই হাঙ্গেরিতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। যে পর্যায়
থেকে যত সমালোচনাই হোক না কেন, হাঙ্গেরির সীমান্ত সুরক্ষিত রাখা হবে।’
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, শরণার্থীদের প্রতি
হাঙ্গেরির মারমুখী আচরণের নিন্দা জানিয়েছেন ইইউর অভিবাসন বিভাগের প্রধান
দিমিত্রিস আভ্রামোয়াপোলাস। তিনি বলেন, ‘সিরিয়া থেকে আসা মানুষের বেশির
ভাগই আমাদের সাহায্য চায়। সহিংসতা ও সন্ত্রাস থেকে বাঁচাতে যারা পালিয়ে
আসে, তাদের কাছে কোনো দেয়াল বা সাগরই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। সাময়িক
সমাধান মনে করে হাঙ্গেরি যা করেছে, তাতে শরণার্থীরা অন্য পথে চলে যেতে
বাধ্য হওয়ায় উত্তেজনাও বেড়েছে।’
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, হাঙ্গেরিতে বাধা পেয়ে বলকান
অঞ্চল ও মধ্য ইউরোপ ধরে শরণার্থীরা এগিয়ে চলেছে। জার্মানিতে বুধবার মোট ৭
হাজার ২৬৬ জন শরণার্থী পৌঁছায়। এ সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় দ্বিগুণ।
ক্রোয়েশিয়ার সীমান্ত শহর তোভারনিকের পুলিশ সার্বিয়া
থেকে আসা বিপুলসংখ্যক শরণার্থীকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। দেশটির
কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, তারা খুব সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যে
শরণার্থীদের জায়গা দিচ্ছে। ক্রোয়েশিয়ায় আগামী দুই সপ্তাহে ২০ হাজারের
বেশি শরণার্থী প্রবেশ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শরণার্থীদের বেশির ভাগই সিরিয়া, ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে
পালিয়ে ইউরোপে গেছে। তারা মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সমৃদ্ধ অর্থনীতির
দেশ জার্মানিতে পৌঁছাতে চায়।
এএফপি জানায়, ইইউর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক
শরণার্থী-সংকট নিয়ে আলোচনার জন্য জরুরি সম্মেলন আহ্বান করেছেন।
বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে আগামী বুধবার ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
টুইটারে গতকাল এক বার্তায় টাস্ক এ কথা জানিয়েছেন।
জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল এবং অস্ট্রিয়ার
চ্যান্সেলর ওয়ের্নার ফায়মানের ডাকে গত সোমবার ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ইইউর
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে শরণার্থীদের পুনর্বণ্টন করে নেওয়ার বিষয়ে
কোনো সমঝোতা হয়নি। হাঙ্গেরি, ইতালি ও গ্রিসে উপচে পড়া শরণার্থীদের ইইউর
সদস্যদেশগুলোতে নির্দিষ্ট সংখ্যায় জায়গা দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে ওই
আলোচনা হয়।
এদিকে গ্রিসের নব্য নাৎসিবাদী দল গোল্ডেন ডনের সমর্থকেরা
দেশটির রাজধানী এথেন্সে গতকাল শরণার্থী ও অভিবাসীদের বিরুদ্ধে স্লোগান
দিয়ে মিছিল-সমাবেশ করেছে। দেশটিতে আগামী রোববার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত
হবে। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের বহু শরণার্থী
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে গ্রিস হয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেছে।
ডেনমার্কের সরকার স্বেচ্ছায় এক হাজার অভিবাসীকে আশ্রয়
দেবে বলে গতকাল ঘোষণা দিয়েছে। তবে অভিবাসনবিরোধী রাজনৈতিক দল ড্যানিশ
পিপলস পার্টি (ডিপিপি) এ সিদ্ধান্তে সমর্থন দিতে অসম্মতি জানিয়েছে।